Quantcast

E-mail: admin@kalersanko.com

Site Logo
Language Translator
 - 
Arabic
 - 
ar
Bengali
 - 
bn
English
 - 
en
Hindi
 - 
hi
Nepali
 - 
ne
Tamil
 - 
ta

চিঠির বাক্স – মনিরা পারভীন

চিঠির বাক্স
Share on facebook
Facebook
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on pinterest
Pinterest
Share on pocket
Pocket

চিঠির বাক্স

– মনিরা পারভীন

 

সময়টা মোটেও ভালো যাচ্ছে না। পারিপার্শ্বিক যন্ত্রণা প্রতিনিয়ত আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলছে। সংসার, জব, একাকীত্ব সব কিছু অসহনীয় হয়ে উঠছে মিথিলার কাছে। দাম্পত্য জীবনের শুদ্ধ কোনো ছকে সে পড়ে না। অনিক জব নিয়ে ঢাকা পড়ে আছে। প্রাইভেট জব। ছুটি নেই বললেই চলে। মিথিলা শুরু থেকেই জয়পুরহাটে আছে। কারও বদলি নিয়ে এক জায়গায় সেটেল হওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। পাঁচ বছর হলো বিয়ে হয়েছে। বেবিও হচ্ছে না। সবকিছু মিলে জীবন ফুলশয্যা নয় তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে মিথিলা। অবসরে সে গান শোনে,বই পড়ে। ফেসবুকে আড্ডা দেয় না বললেই চলে। খুব বেছে ফেবু বন্ধু নির্বাচন করে। খুব কম সংখ্যক ব্যক্তির সাথে কথা বলে। প্রথম প্রথম তার ধারণা ছিল বয়ষ্ক মানুষেরা ভদ্র হবে নিশ্চয়ই। কম বয়সের মেয়ে দেখে প্রেমের প্রস্তাব অথবা কু প্রস্তাব দিবে না। কিন্তু মিথিলা ইজ রং। সে মানুষ চিনতে ভুল করেছে। এটা সে বরাবরই করে।সেদিন এক সত্তর উর্ধ্ব ভদ্রলোক এ্যাড হয় ফেবুতে। স্ত্রী গত হয়েছে বছর চারেক। মিথিলা তাকে বাবার মতো জেনে কথা বলে। তবে ওই তথাকথিত ভদ্রলোক তাকে খারাপ ইঙ্গিত করেন। তখন ঘেন্নায় মিথিলা তাকে ব্লক করে দেয়।
রাত গভীর। বারান্দায় দাঁড়িয়ে মিথিলা উপভোগ করছে নিকোশ কালো রাত্রি। তার জীবনটাও এমনি। তবু আলোর প্রত্যাশায় ভোর হয়। জীবনের আলো এতো সহজে দেখা দেয় না। উদাস মন তার আহত পাখির মতো ছটফট করতে থাকে। ঘরে এসে মোবাইল হাতে নিতেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট চোখে পড়ে। প্রোফাইল পিকটা আকর্ষণীয়। মার্জিত, সুদর্শন এক পুরুষ। পুরোটা দেখার ইচ্ছে হলো মিথিলার। বিসিএস ক্যাডার শিক্ষা। নাম তন্ময়। টাইম লাইন ঘুরতে চোখে পড়ল তার গাওয়া একটা গান। যে গান মিথিলাও ঘুম না এলে শোনে। চুপকে চুপকে রাত এ দিন আসু বাহানা ইয়াদ হে। রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে মিথিলা। পরের দিন সকালে ডাটা অন করতেই মেসেজ আসে। শুভ সকাল। মিথিলাও লিখে পাঠায় শুভ সকাল।
করোনাকাল চলছে। থমকে গেছে পৃথিবী। বদলে গেছে জীবনযাত্রা। মানুষের পরিবর্তন সত্যিকার অর্থে কতটা এসেছে তা প্রশ্নের সম্মুখীন। মিথিলা এক কাপ চা খেতে খেতে মানুষ দেখছে আর ভাবছে। এখন সব সীমিত আকারে চলছে। অফিসে রোজ যাবার তাড়া নেই। তাই বাড়িতেই আছে। অফিস থাকলে বিকেলটা এভাবে উপভোগ করার সুযোগ থাকে না। মিথিলার একটা ছাদ বাগান আছে যা অনেকেরই খুব পছন্দ। মাঝে মাঝে ফেবুতে পিক দেয়। অনেকে লাইক কমেন্ট করে। কেউ শুধু দেখেই যায়। তাদের অনুভূতি প্রকাশের ভাষা নেই, নয়তো সময়,নয়তো অন্য কিছু। এমন সময় মোবাইলে মেসেজের শব্দ। সেই মানুষটি লিখেছে, শুভ বিকেল।
সৌজন্যতার কারনে সে-ও দিলো,শুভ বিকেল।
শুরু হলো চ্যাটিং।
— কথা বলার অনুমতি হবে?
— বন্ধু যখন করেছি তখন হবে বৈকি।
—- বিরক্ত হবেন না তো?
— বিরক্তির কারন হলে হব নিশ্চয়ই।
— বলছিলাম, আমার বাড়ি কুষ্টিয়া। জবের কারনে বরিশালে আছি। এক সন্তান আর একজন স্ত্রী। আপনার?
— আমার বাড়ি জয়পুরহাটে। আমি এখানেই জব করি। সাহেব ঢাকা থাকেন। প্রাইভেট জব। বেবি নেই এখনো।
— বেশ তো। চিন্তা করার কিছু নেই। হয়ে যাবে নিশ্চয়ই।
— থাক এসব। আপনার গাওয়া গানটি কিন্তু আমার খুব পছন্দ। ঘুম না এলে প্রায় রাতেই শুনি। গেয়েছেন বেশ।
— চেষ্টা করেছি মাত্র। গিন্নী এসব পছন্দ করে না। তাই,,,
— এমনটাই স্বাভাবিক। কোথায় এখন আপনি?
—- একটা পুকুর পাড়ে।
— বাহ! আজ আবহাওয়া এখানেও বেশ। ঝিরিঝিরি বাতাস। নীল আকাশ। মনটা দেহে নেই।
— আমার এখানেও। পাতারা নাচছে। বাতাস গাইছে।
—- কি বলছে গানে?
— খুঁজে পেলাম অবশেষে।
— সত্যি পেলেন!
—- আপনি চাইলে।
— চাইবার মতো সাহস সঞ্চয় করতে পারিনি।
— খুব বেশি কিছু চাই না। অবসরে নিঃসঙ্গতার এক বন্ধু।
— অচিন পাখি এসে গান শুনিয়ে উড়ে যদি যায় একা করে।
— যাবে না।
— হারাবার ভয় খুব। না পাওয়ার কষ্ট যতটা না কষ্ট দেবে, পেয়ে হারানোর ব্যথা তার চাইতেও অধিক। সে যে বয়ে বেড়ানোর মতো মনের শক্তি নেই। প্রখর রোদে এক টুকরো কালো মেঘ যতটা স্বস্তি আনে তারচেয়ে বেশি হতাশ করে ভেসে গিয়ে।
— এতো সুন্দর করে কথা বলেন আপনি। মুগ্ধ হয়ে শুনতে ইচ্ছে করে।
— হয়তো বোঝার মতো মনটাই আমাকে বড় করে তুলছে।
— দূর হতে চাঁদ দেখে যাব। এই পুকুরে নেমে আসবে জ্যোৎস্না রাতে। আমি গল্প করব। জলে দু’জনার ছায়া পড়বে। সেখানে মিশে যাব। পারবেন সময় দিতে?
— সময় কথা বলবে। সময় বড় অদ্ভুত রকম সুন্দর এবং সত্য।
— ওকে। অপেক্ষায়।
— বিদায়।
মিথিলার বুকের ভেতর দোলা লাগে। সে-ও এমন কাউকে খুঁজছিল। যার সাথে জীবনের লেনাদেনা নেই। একটা বিশ্বাসী মানুষ। যার কাছে সব বলা যায় সহজে। যার সাথে শুধু অদৃশ্য মনের সম্পর্ক গড়ে উঠবে। এদিকে তন্ময়ও এক সজীবতা ফিরে পেল। বর্তমানে ফেবুতে কাউকে পাওয়া জটিল। আর এভাবে তো আশা করাই যায় না। বিশ্বাসী মানুষের অভাব। সম্মান হারাবার ভয় থাকে। মিথিলাকে তার ভালো লেগেছে। মেয়েটির ব্যক্তিত্ব আছে। সুন্দর, পরিষ্কার একটা মন আছে।
তাদের এভাবে চ্যাটিং চলতে থাকে। তন্ময় প্রথমেই কিছু কথা বলে মিথিলাকে। আমরা সেম এজ। তাই তুমি বলব। তাছাড়া বন্ধুও বটে। আর আমাকে কখনো নক করবে না। আমি ফ্রি হয়ে তোমাকে নক দিব। গিন্নী সন্দেহ করে। আর এই করোনা কালে বাসায় বেশি সময় থাকতে হচ্ছে। তোমার ভাবি প্রেগন্যান্ট। তিনমাস চলছে। কাজের বুয়া নেই। বড় মেয়েটার বয়স আট হলো। ওকেও সময় দিতে হয়।
তবে আমার একটা ফেক আইডি আছে। তুমি ওখানে নক করতে পার। সেই চিঠির বাক্সে চিঠি দিয়ে রাখবে। আমি সময় করে পড়ব।
—মিথিলা সব বুঝে বলে, আচ্ছা। তবে একটা কষ্ট থেকে যাবে। আমার কখনো ইচ্ছে হলে তোমাকে পাব না। কথা বলতে ইচ্ছে করলেও উপায় থাকবে না।
—চিঠির বাক্স তো থেকে গেলো। আমার পরী সেখানে লিখবে।
— তাই হবে।
এভাবে দু’জনার সম্পর্ক গড়িয়ে যেতে থাকে। অনেক কথা শেয়ার করে। মিথিলার প্রতি তার হাসব্যান্ড এর উদাসীনতা, অবহেলা সব কিছু শেয়ার হয়। তন্ময় তার জীবনের গল্প বলে। তাদের মধ্যে নির্ভেজাল এক আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু মিথিলা অস্থির হয়ে পরে। বেশ কিছুদিন হলো তন্ময় কোনো যোগাযোগ করছে না। চিঠির বাক্স খুলে দেখছে না। আজেবাজে নানা ভাবনা তাকে চিন্তিত করে তোলে।
সেদিন সন্ধ্যায় হঠাৎ ফোন এলো তন্ময়ের।
—আমার পরী,কেমন আছ তুমি?
— এতোদিন পর মনে হলো? কী হয়েছিল? কেমন আছ? ভাবি সুস্থ আছে তো? তোমার কিছু হয়নি তো?
— মিথিলার প্রশ্ন শুনে তন্ময়ের মনে মনে এক আনন্দের ঢেউ খেলা করে। একটু হেসে বলে, এতো ভেবেছ আমাকে নিয়ে? তুমি খুব কষ্ট পেয়েছ পরী? আমি সরি।
—- ওমা! কী বলো? ভাবব না? সত্যি খুব ভয় হচ্ছিল। আইডিতেও দেখি কোনো স্ট্যাটাস নেই। এমন কেউ নেই যে জানতে পারব।
— আমার পরী। একটু বিজি ছিলাম। মা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে নিয়ে ছুটোছুটি।
— বেশ তো। একটা লাইন কী লিখতে পারনি? আমি তো খুব ভয় পেয়েছি।
— সত্যি যদি হারিয়ে যাই। তুমি কী করবে পরী?
—- চুপ কর।
— আমাদের দেখা হয়নি। তবু যেন কত আপন আমরা। একজন আরেকজনের কত কাছাকাছি।
— ঠিক তাই।
— আমি কোথায় আছি জানো?
— না বললে জানব কী করে?
— হাহাহা। আমি একটা ক্লাবের সামনে। ভেতরে বন্ধুরা খেলছে। অনেক মশা। রক্ত খেয়ে মজা পাচ্ছে।
— ইস! তাহলে রাখ। ভেতরে যাও। পরে দিও।
— না পরী। তোমাকে পেলে এসব আমার কিছুই মনে হয় না।
— তন্ময়,একটা ভিডিও কল দাও। দেখব তোমাকে।
— আচ্ছা? আমি তো পঁচা দেখতে।
— আমার কাছে রাজপুত্র।
— এই যে দেখ, এ কথা বলে তন্ময় ক্যামেরা অন করে। আলো কম এখানে পরী।
—মাক্স খুলে দাও। কেউ তো আর নেই।
— খুললাম।
— তোমাকে খুব মিষ্টি দেখাচ্ছে।
— তোমার চোখে। আমাদের সম্পর্ক পবিত্র তাই হয়তো। তুমি অনেক সুন্দর তন্ময়। সুদর্শন।
—- আর বলো না কিছু। ফুলে যাব। তখন উড়ে তোমার জয়পুরহাট চলে আসব।
— আস একদিন।
—সময় দিতে পারবে?
— কিছুটা সময় দেব। আমার বন্ধু আসবে। না দিলে হয়?
— আচ্ছা। চমকে দিতে আসব। এসেই ফোন দেব।
—কেমন পারবে জানা আছে।
একসময় কথা তাদের শেষ হয়। মিথিলার চোখে ঘুম নেই। একের পর এক গান শুনে যাচ্ছে। এখন বই পড়তেও অনিহা। আগে বই ছিল সঙ্গী। এক সময় গান গাইত। এখন কারো নিষেধের কারনে গাওয়া হয় না। তন্ময়কে একদিন গান শুনিয়েছিল।
নজরুলের বিখ্যাত গান–
আমায় নহে গো, ভালোবাস শুধু ভালোবাস মোর গান।
রোজ সন্ধ্যায় তন্ময় বাসা থেকে বের হয়। আজও হয়েছে পুকুর পাড়ে এসে ফোন দেয় মিথিলাকে। তন্ময় মিথিলার প্রতি আসক্ত নয়। তবে সময়টা তার একটু ভালো কাটছে এই যা। একটা পরিচ্ছন্ন মেয়ে। কোনো ভণিতা নেই। সহজ সম্পর্ক গড়তে পারে। চাওয়া পাওয়া শুধু ভালো থাকা। আজকের আবহাওয়া প্রেমে পড়ার মতো। বৃষ্টি থেমে গেছে। জ্যোৎস্না রাত। রুপোলী আলোয় জ্বলছে ভেজা পথ।
মিথিলাকে ভিডিও কল দেয় তন্ময়। জয়পুরহাটেও বৃষ্টি হয়েছে। মিথিলা হাঁটছে ছাদে। চাঁদের দিকে চেয়ে তন্ময়কে ভাবছে আর এ সময় রিং টোন বেজে ওঠে।
— কেমন আছ পরী?
—-যেমন রেখেছ।
—-হুম। পরীকে খারাপ রাখা যায়? মিষ্টি পরী।
— খুব সুন্দর লাগছে তন্ময়। ঝিরিঝিরি বাতাস। চাঁদ খেলছে পাতায়। দুলছে জলে।
— ঠিক বলেছ পরী। এই দেখ পুকুরে।
—তুমিও চাঁদের মতো আলো ছড়াচ্ছ।
—একটু বেশি হলো না?
— আমার কাছে সে কী হবার!
—- আচ্ছা পরী, যদি আর কখনো কথা না হয়?
— তুমি চাঁদ হয়েই থাকবে।
— হঠাৎ যদি হারিয়ে যাই।
— স্মৃতির পাতায় থাকবে।
— মন খারাপ হবে না?
— মনকে বোঝাব।
— কী বোঝাবে?
— মন তোর আকাশে উড়েছিল এক চিল। জীবনানন্দের সেই সোনালী ডানার চিল। ভুল করে এসেছিল ভুলে। জীবনের ইতিহাসে লিখে রাখ তার নাম।
— এভাবে বলছ কেন পরী? আমি তোমার পাশে আছি। চলে আস আমার কাছে।
—বড্ড আবেগের কথা। নয়তো হেয়ালি করছ।
— এমন কিছু নয়। পরী, অনেকটা পথ চলে এসেছি। রিক্সা নিলাম।
—আচ্ছা তবে যাও।
— আমার পরীর কাছে যাব। হাত ধরে বসে গল্প করব। কাঁধে মাথা রেখে গান শুনব-
কোথাও যদি হারিয়ে আমি যাই গো কোনো দিন,যেও ভুলে আমায় যেও ভুলে।
বলতে বলতে রিক্সা থেমে যায় বাড়ির সামনে। মিথিলাকে ফিসফিস করে বলে, চলে এসেছি পরী। তুমি কিছু লিখ না। আমি ফ্রি হলে ফোন দিব।
মিথিলা মন ভার করে বলে, তোমার অসুবিধে হবে এমন কিছু করব না। অপেক্ষায় থাকব।
তন্ময় আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে,তা জানি পরী। তবে চিঠির বাক্স থাকল। রাখি তবে।
লাইনটা কেটে গেল। মিথিলা ঘরে এসে বিছানায় হেলান দিয়ে বসলো। কোনো কিছুই মনকে স্বাভাবিক করবে বলে মনে হচ্ছে না। ফেবুতে ঢুকে লাইক কমেন্ট করতে লাগলো। কিন্তু মন অস্থির। ভাবল চা করে খেলে ভালো লাগবে। তবু বিষন্নতা ছেয়ে যাচ্ছে। বারান্দায় এসে গ্রিল ধরে দাঁড়াল। বাতাসে খোলা চুল উড়ছে। উদাসী মন বাতাসে কারো স্পর্শ অনুভব করছে। এদিকে দুই পাশের পাঁজর যেন বুকটাকে চেপে ধরেছে। মিথিলা জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবার মুভি ছেড়ে দিলো। পুরোনো মুভি যা আগে দেখা হয়নি। খুব ভালো লাগলো তার। অতঃপর রাতের অন্ধকারে ডুবে গেলো।
এভাবে কেটে গেলো কয়েক মাস। ঘটে গেলো নানা ঘটনা। সময়ের সাথে জীবনের পরিবর্তন বড় বিচিত্র। মানুষ জানে না আজ যা ভাবছে, আগামীর যে চিত্র সে এঁকে রেখেছে একদিন তার পুরোটাই উল্টে যেতে পারে। এ কয়েক মাসে মিথিলা খুব ভালো করে জেনে গেছে – মানুষ পৃথিবীতে আসে একা, সারাজীবন সে একা,চলে যাবেও একা। বিকেলে অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে ফিরতে কতো কথাই না আজ মনে পড়ছে মিথিলার। নিজের অতীতটার দিকে তাকালে ভবিষ্যৎ বড় অন্ধকার মনে হয়। তবু হাল ছাড়ার মেয়ে নয় মিথিলা। রুমে ঢুকে ব্যাগ রাখতেই রিং টোন বেজে উঠল। তন্ময়ের ছবি ভেসে উঠতেই মিথিলার বুক দপ করে উঠল যেমন জ্বলে ওঠে দেয়াশলাইয়ের কাঠি। নিভে গেলো তেমন করে যেমন করে পুড়ে যায়। একটু ভেবে রিসিভ করল। খুব নরম সুরে সেই পরিচিত কন্ঠ-
— পরী, কেমন আছ তুমি?
— খুব কষ্টে মিথিলা বললো, ভালো। তুমি?
—- পরী ছাড়া ভালো থাকি কীভাবে?
— হো হো হো করে মিথিলা হেসে উঠল। এ যেন পাহাড় ভাঙ্গার শব্দ। অভিমান জমে পাথর হয়ে গড়েছিল এক পাহাড়।
— এভাবে হাসছ কেন পরী?
পরী কিছুক্ষণ চুপ থাকল। তার হাসি, নিরবতা কোনো কিছু বোঝার ভাষা তন্ময়ের নেই। নিজেকে আড়াল করল কিছুটা। জিজ্ঞেস করল-
—- বাবা হয়েছ?
— হুম। একটা রাজপুত্র হয়েছে। ছয় মাস হলো।
— আলহামদুলিল্লাহ। অভিনন্দন তোমাকে।
— তোমার কী খবর?
— দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল মিথিলা। বললো, আমি একা।
—- বুঝলাম না।
— তন্ময়কে একটু সহজ করার জন্য হাসি মুখে বললো, একা মানে একা। তার সাথে সেপারেশন হয়েছে।
— অবাক হলো তন্ময়। বললো,কবে? কেন হলো?
— পরী আর বিস্তারিত কথায় গেলো না। বললো,মাস পাঁচেক হলো।
—- পরী, তুমি চিঠির বাক্সে চিঠি দাওনি কেন? আমি তো রোজ চেক করতাম।
— মিথিলা একটু আক্ষেপের হাসি এনে বললো, দিয়েছিলাম। তোমার দেখার সময় হয়নি। পরে তা আর রাখার প্রয়োজন বোধ করিনি।
—এতো অভিমান?
— ঠোঁটের কোণে কষ্টের হাসি এনে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, অভিমান! কার ওপর করব বলো! এখন আর অভাব বোধ নেই,নেই প্রত্যাশা। নদী চলছে বয়ে আপন গতিতে। মৃত্যু সাগরে। এখন আর কারো জন্য অপেক্ষা নেই। নিঃসঙ্গতার সঙ্গী নেই। এখন আমি একাই বাঁচতে শিখেছি।
— অনেক শক্ত করে বললে। বেশ ভালো থেকো। মনে পড়লে বাক্সে চিঠি দিও।
—- কতবার, কতদিন সে বাক্স খুলে চোখের পলক ফেলেছি! কত প্রহর নিষ্পলক চেয়ে থেকেছি ছবিটার দিকে। আহ! সে কী বিশাল শূন্যতা। কোনো চিহ্ন মাত্র নেই। সে বাক্সের অপমৃত্যু ঘটেছে। যা হোক, ভালো থেকো তুমিও।
কটাস করে লাইন কাটার শব্দ। তন্ময় অবাক হলো। কতোটা বদলে গেছে পরী। সে যে অপরাধী এ কথা তার বিবেকের কাছে অস্বীকার করবার উপায় নেই। কিছুটা নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত ছিল তন্ময়। পরীকে সে অবসরের এক বিনোদন হিসেবেই নিয়েছিল মাত্র। কিন্তু মেয়েটা তেমন নয়। সে আমার ক্ষতি হবে ভেবে একাই কষ্ট পেয়েছে। তবু যোগাযোগ করেনি। তন্ময় মিথিলাকে মেসেজ দিতে গিয়ে দেখলো পরী তাকে ব্লক করে দিয়েছে। কী অদ্ভুত! কথা শেষ করতেই ব্লক। চিঠির বাক্সটা খোলা আছে। তবু ভাবছে তন্ময় আর কী কিছুই বলার ছিল না তার! আর কী কিছুই শোনার নেই তার! এখানে এভাবেই মৃত্যু হবে একটা সম্পর্কের! ইদানীং সম্পর্ক গুলো কতো ক্ষণিকের। কিন্তু মুছে যায় কী ফেলে আসা স্মৃতি! থেকে যায় ইতিহাস হয়ে জীবন পাতায়।

 

লেখা জমা দেওয়ার ফর্মOnnoalo

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on print
Print

সম্পর্কিত পোষ্ট……

প্রিয় লেখা
Memory foam seat pillow cushion. Mail in repairs drones etc. Beispiel seite forum apps.