Quantcast

E-mail: admin@kalersanko.com

Site Logo
Language Translator
 - 
Arabic
 - 
ar
Bengali
 - 
bn
English
 - 
en
Hindi
 - 
hi
Nepali
 - 
ne
Tamil
 - 
ta

কাব্যছড়া ভাবনা ও কিশোর কবিতার অপ্রাসঙ্গিকতা – জগলুল হায়দার

কাব্যছড়া ভাবনা ও কিশোর কবিতার অপ্রাসঙ্গিকতা - জগলুল হায়দার
Share on facebook
Facebook
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on pinterest
Pinterest
Share on pocket
Pocket

কাব্যছড়া ভাবনা ও কিশোর কবিতার অপ্রাসঙ্গিকতা

– জগলুল হায়দার

 

শূন্য দশকের মাঝামাঝি সময়ের কথা। সে সময় প্রায়ই যুগান্তরে যাই। আড্ডা জমতো পিনটু ভাইয়ের (শিশুসাহিত্যিক আশরাফুল আলম পিনটু) ওইখানে। একদিন টেলিফোনে কোন সাহিত্য কাগজের সম্পাদকের সংগে কথা শেষ কইরাই বললেন – কিশোর কবিতা দিতে পারবেন? ব্যাপারটা আমার কাছে দিতে পারার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। তবুও বিনয়ের সাথে বললাম – কিশোর কবিতা লেখি না তো। পিনটু ভাই ভালোবাসেন তাই ভালোবাসার অধিকারে একটু শক্ত গলায়ই বললেন- এত সুন্দর ছড়া লেখেন, কিশোর কবিতা লেখেন না ক্যান? সেদিন তাকে আর কিছু বলি নাই। কি বলবো, আসলে কিশোর কবিতা পদব্যাচ্যটাই আমি মানতে পারতাম না। তাই অই জাতীয় কবিতা টুকটাক লেখলেও আমি ছড়ার বাইরে অইসবের আলাদা কোন পরিচয়ও দিতাম না। আমার কাছে অইগুলা ছড়াই।

যাক পিনটু ভাইয়ের সেই পরামর্শ আমারে কিশোর কবিতা নিয়া ভাবার অবকাশ তৈরি কইরা দিলো। তিনি চান আমি এই ধারার লেখা বেশি কইরাই লেখি। আমিও মনস্থির করলাম লেখতে হইব। তবে এই নামে লেখব না। কারণ নামটা আমার যৌক্তিক মনে হয় না। কি নামে লেখব তাইলে? এই ধারার কবিতা লেখায় অই সময় জোর একটু বাইরাও গেলো। তবে তখনো লেখাগুলার শিরোনাম ঠিক করতে পারি নাই। এই অবস্থায় কথিত কিশোর কবিতা আর তার ইতিহাস সম্পর্কে খোঁজ খবর একটু বাড়াইলাম।

দেখলাম এসবের অস্তিত্ব রবীন্দ্রনাথেও ছিল নজরুলেও ছিল। ছিল জসীমউদ্দিন সহ আরও অনেকের মধ্যেই। কিন্তু সে যুগের কোথাও কিশোর কবিতা নামের সন্ধান পাইলাম না। এর পর ৪৭ উত্তর সময়ে সৈয়দ আলী আহসান, আবু হেনা মোস্তফা কামাল থেকে আহসান হাবীব সহ আরও অনেকেই এই ধারায় চিহ্নিত করা হয় এমন অনেক সার্থক কবিতা লেখছেন। কিন্তু সেখানেও এগুলাকে আলাদা কোন ধারা হিসাবে উল্লেখ করে নাই কেউ।
বলা যায় ৭০ এর দশকে আইসা এই নামের আওয়াজ উঠছে। আর সম্ভবত এর আমদানী হইছে পশ্চিম বঙ্গ থেকে। আর একশ্রেনীর লেখক এইসব কবিতা চর্চায় যতোটা না মন দিছেন তার চাইতে ঢের দিছেন এর নাম কীর্তনে। নাম কীর্তনের পাশাপাশি কেউ আবার এগুলাকে নিজের দখলের বিষয় হিসাবে দেখাইবার অপচেষ্টাও করছেন।

যেহেতু নাম ছিল না। তাই এই প্রবন্ধে এগুলারে আমরা কিশোর কবিতা না বইলা কিশোর কবিতা হিসাবে চিহ্নিত কবিতাই বলবো। এই ধারার কবিতার মেজাজ আর মর্ম বোঝার জন্য কিছু উদাহরণ দেখা যাক।

সোম মঙ্গল বুধ এরা সব/আসে তাড়াতাড়ি
এদের ঘরে আছে বুঝি/ মস্ত হাওয়া গাড়ি?
রবিবার সে কেন মাগো,/এমন দেরী করে?
ধীরে ধীরে পৌঁছায় সে/সকল বারের পরে
আকাশ পাড়ে তার বাড়িটি/দূর কি সবার চেয়ে?
সে বুঝি, মা তোমার মতো/গরীব ঘরের মেয়ে।

মনে করো, যেন বিদেশ ঘুরে/ মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে
তুমি যাচ্ছ পালকিতে মা চড়ে /দরজা দুটো একটুকু ফাঁক করে
আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার পরে /টগবগিয়ে তোমার পাশে, পাশে।
(রবিবার ও বীরপুরুষ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)।

আমি হব সকাল বেলার পাখি /সবার আগে কুসুম বাগে উঠব আমি ডাকি
সূর্য্যমিামা জাগার আগে উঠব আমি জেগে /’হয়নি সকাল ঘুমো এখন’ মা-বলবেন রেগে।

কাঠবেরালি! কাঠবেরালি পেয়ারা তুমি খাও? /গুঁড় মুড়ি খাও? দুধভাত খাও?
বাতাবি লেবু? লাউ? বেড়াল-বাচ্চা? কুকুর ছানা? তাও? /ডাইনি তুমি হোৎকা পেটুক?
খাও একা পাও যেথায় যেটুক!
( খোকার সাধ ও খুকি ও কাঠবিড়ালি, কাজী নজরুল ইসলাম)

ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা
তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা
ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
ও সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি
সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি।।
( ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা, দিজেন্দ্রলাল রায়)।

গোপালটা কি হিংসুটে মা! খাবার দিলেম ভাগ করে
বল্লে নাকো মুখেও কিছু, ফেল্লে ছুঁড়ে রাগ করে
জ্যাঠাইমা যে মিঠাই দিলেন ‘দুই ভায়েতে খাও’ বলে-
দশটি ছিল একটি তাহার চাখতে দিলাম ‘ফাও’ বলে..
তাও মানে না কেবল কাঁদে স্বার্থপরের শয়তানী
শেষটা আমায় মিঠাইগুলো খেতেই হল সবখানি ( নিঃস্বার্থ, সুকুমার রায়)

এইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে,
তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।
এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ,
পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।
এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিতে ভেবে হইতাম সারা,
সারা বাড়ি ভরি এত সোনা মোর ছড়াইয়া দিল কারা।
( কবর, জসীমউদ্দীন)।

করিতে পারি না কাজ /সদা ভয় সদা লাজ
সংশয়ে সংকল্প সদা টলে – পাছে লোকে কিছু বলে।
(পাছে লোকে কিছু বলে, কামিনী রায়)।

বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই
মাগো, আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই?
পুকুর ধারে, নেবুর তলে থোকায় থোকায় জোনাই জ্বলে,
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, একলা জেগে রই;
মাগো, আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই?
(কাজলা দিদি, যতীন্দ্রমোহন বাগচী)।

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, /সবার আমি ছাত্র,
নানান ভাবে নতুন জিনি /শিখছি দিবারাত্র। এইপৃথিবীর বিরাট খাতায়,/পাঠ্য যেসব পাতায় পাতায়
শিখছি সে সব কৌতূহলে, /নেই দ্বিধা লেশমাত্র।

( সবার আমি ছাত্র, সুনির্মল বসু)।

আলোর পাখি নাম জোনাকি/ জাগি রাতের বেলা

নিজকে জ্বেলে এই আমাদের/ ভালোবাসার খেলা।

(জোনাকিরা, আহসান হাবীব)।

ট্রেন যায় হিশ হিশ/ বায়ু যায় ফিশ ফিশ/ ট্রাক যায় ধুপ ধাপ/

গরিবের দিন যায়/ কী কর/ কী করে/ কী করে/

জানবার সাধ হলে/ হাত দাও শিকড়ে/ শিকড়ে/ শিকড়ে।

(শিকড়ে, আসাদ চৌধুরী)।

উদাহরণের ভার আর বাড়াইতে চাই না। তবে এরকম আরও অনেক আছে।

এবার একদম নির্ভেজাল কিছু ছড়ার উদাহরণ দেখা যাক।

আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম সাজে / ঢাক -ঢোল ঝাঁঝর বাজে
বাজতে বাজতে চলল ঢুলি /ঢুলি গেল কমলাফুলি
কমলাফুলির টিয়েটা /সুর্যি মামার বিয়েটা ।

( লোকো ছরা)

আজগুবি নয়, আজগুবি নয়, সত্যিকারের কথা-
ছায়ার সাথে কুস্তি করে গাত্রে হল ব্যাথা।
ছায়া ধরার ব্যবসা করি, তাও জাননা বুঝি?
রোদের ছায়া, চাঁদের ছায়া, হরেক রকম পুঁজি!
শিশির ভেজা সদ্য ছায়া, সকাল বেলায় তাজা,
গ্রীষ্মকালে শুকনো ছায়া ভীষণ রোদে ভাজা।

(ছায়াবাজি, সুকুমার রায়)।

সফদার ডাক্তার/মাথা ভরা টাক তার
খিদে পেলেপানি খায় চিবিয়ে।
চেয়ারেতে রাত দিন /বসে গুনে দুই তিন
পড়ে বইআলোটারে নিভিয়ে।
(সফদার ডাক্তার, হোসনে আরা বেগম)

ঐ দেখা যায় তালগাছ /ঐ আমাদের গাঁ
ঐ খানেতে বাস করে /কানা বগীর ছা।
ও বগী তুই খাস কী? /পানতা ভাত চাস কি?
পানতা আমি খাই না /পুঁটিমাছ পাই না
একটা যদি পাই /অমনি ধরে গাপুস গুপুস খাই।

(কানা বগীর ছা, খান মুহম্মদ মঈনুদ্দীন)।

ঝালের পিঠা ঝালের পিঠা /কে রেঁধেছে কে?
এক কামুড়ে একটুখানি /আমায় এনে দে।
কোথায় পাবো লঙ্কাবাটা /কোথায় আতপ চাল,
কর্ণফুলির ব্যাঙ ডাকছে /হাঁড়িতে আজ কাল।
(ঝালের পিঠা, আল মাহমুদ)।

এরকম অজস্র ছড়া আছে আমাদের সাহিত্যে। কিন্তু প্রবন্ধের পরিসর বিবেচনায় উদাহরণ এর রাশ এইখানেই টানলাম। আর ছড়া সম্পর্কে সাধারণ ধারণার জন্য আপাতত এই উদাহরণগুলাই যথেষ্ট।

আমরা চিহ্নিত কিশোর কবিতা আর ছড়ার উদাহরণগুলা পাশাপাশি দিলাম যাতে পাঠক দুইটার চারিত্র-বৈশিষ্টের ফারাকটা নিজেরাই করতে পারেন। আমরাও তা করতে পারতেছি। প্রথম ধারার উদাহরণ এর সংগে দ্বিতীয় ধারার উদাহরণগুলার একটা তফাত চোখে পড়তেছে। এই পার্থক্য তাদের আলাদা গোত্রভুক্ত করার জন্য যথেষ্ট। বুঝতে পারতেছি সে কারণেই হয় তো প্রথমোক্ত লেখাগুলার জন্য ছড়ার বদলে ভিন্ন একটা নাম দরকার ছিল। আর তাৎক্ষনিক দরকার মিটাইতে যা হয় হুটহাট কিছু একটা করা। সম্ভবত এইভাবেই একদিন পাইলাম কিশোর কবিতা নামটা। এরপর পদ্মা মেঘনায় অনেক পানি গড়াইলেও এই নামে আর যথার্থ পরিবর্তনটা আসে নাই।

 

পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার উত্তর সন্ধানের আগে কোনো বিষয়ের নাম করণের বিবেচ্য নিয়াও একটু কথা বইলা নেই। সাধারণত নাম করণের ক্ষেত্রে বিষয়টার চরিত্র, উৎস আর মূল প্রবনতাগুলার দিকে নজর রাখা হয়। একেক জিনিসের একেক পেরিফেরিতে নাম হইতে পারে। যেমন মালদই আমের নাম হইছে তার উৎস থেকে। অর্থাৎ এইটা মালদা জেলায় হয়। আবার চিনিগুড়া চালের নাম হইছে তার সাইজ বিবেচনায়। কিন্তু বাসমতী চাইলের নাম হইছে তার সুগন্ধ বিবেচনায়। তেমনি চিত্রল হরিণ তার গায়ের চিত্র বিবেচনায়। এইসবের আবার ভুল প্রয়োগের নজীরও আছে। যেমন সিএনজি চালিত অটোরিকশার নাম হইছে স্রেফ সিএনজি। আবার ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে এই উপমহাদেশে সব মোটরবাইকের নাম হইছে হোন্ডা। এই নাম দুইটা ঠিক হয় নাই তবে ডাকতে ডাকতে চালু হইয়া গেছে। এইটা সিএনজি বা হোন্ডার ব্যাপার বইলা মাইনা নেয়া যায়। কিন্তু একটা সাহিত্যিক জেনের বা শাখার ক্ষেত্রে যুগের পর যুগ এই ধরণের একটা বেঠিক (ভুল বলছি না) নাম মানা যায় কি? আমার মতো অনেকেই মনে করবেন যায় না। পরিবর্তনে যাওয়ার আগে আরো কিছু বিষয় পরিষ্কার হওয়া ভাল। এই যেমন বলছি যে কিশোর কবিতা নামকরণ বেঠিক কিম্বা লাগসই নয়। কিন্তু এই কথাটাই বা কতোটা ঠিক সেইটাও তো দেখতে হইব। মানুষ যুক্তি দিয়াই বিচার করবো। তাই এই নিয়া কিছু যৌক্তিক প্রশ্ন তুলতে চাই। আর সেইসবের জবাবও অনুসন্ধান কইরা দেখি।

 

যদি প্রশ্ন করি কিশোর কবিতা কেন কিশোর কবিতা? কিশোররা লেখেন তাই জন্য? তাই যদি হয় তাইলে উপরোক্ত কিশোর কবিতাগুলার রচয়িতারা কি কিশোর ছিলেন? উত্তর না। এমন কি আজকাল আমরা যারা লেখতেছি তারাও কেউ কিশোর নই।

 

কিশোর কবিতা কি কেবল মাত্র কিশোররা পাঠ করেন তাই এগুলা কিশোর কবিতা? এর উত্তরও না। বরং তুলনামুলক একটু বয়সীরাই এগুলা পড়েন। আর আমরা লেখকরা তো পড়িই।

 

তাইলে কিশোর কবিতা কি এমন কোন কবিতা যা পুরনাজ্ঞ কবিতা হইয়া উঠতে পারে নাই? অর্থাৎ খোদ কবিতাটাই ম্যাচুরিটির নিরিখে কৈশোর অতিক্রম করে নাই? এই প্রশ্নগুলারও অবধারিত জবাব হইল না এবং না।

আমাদের উদ্দেশ্য প্রতিপাদনের জন্য এই প্রশ্নগুলা আর তাদের উত্তরই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু এর সংগে আরেকটা প্রশ্ন যোগ করতে হইতেছে, এক কিশোরী পাঠক বন্ধুর প্রাসঙ্গিক উচ্চারণের প্রেক্ষিতে। তারে যখন কাব্যছড়া বা কিশোর কবিতা নিয়া বলতেছিলাম তখন এক পর্যায়ে সে বলছিলো- ভাইয়া তাইলে কিশোর কবিতা কি আমরা কিশোরীরা পড়তে পারবো না? আমি তার এমন প্রশ্নে চমক আর পুলক দুইটাই অনুভব করছি। চমক ছিল কারণ এইটা একটা জটিল প্রশ্ন। আর পুলকিত হইছি এই ভাইবা যে আমাদের প্রস্তাবনার স্বপক্ষে আরেকটা বাড়তি যুক্তি পাওয়া গেলো। যখন দুনিয়াব্যাপি লিঙ্গসাম্য বা Gendar equity নিয়া এতো হইচই তখন এইটা বরং খুব কঠিন একটা যুক্তি। এবং সর্বত্রই এই বৈষম্য বিলোপের একটা চেষ্টা আছে। হাতের কাছের একটা উদাহরণ দেই। বাংলাদেশের দুইটা বড় রাজনৈতিক দলের একটা হইল বিএনপি। এই দলটার প্রধানকে এক সময় চেয়ারম্যান বলা হইত। কিন্তু ৮০’র দশকে এই পদে আসীন হন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি নারী। তার পদের মধ্যে ‘ম্যান’ শব্দটা কাঁটার মতো লাগতেছিল বোধয়। তাই শেষে অই ‘ম্যান’ শব্দটা পরিবর্তন কইরা সেইখানে লিঙ্গনিরপেক্ষ ‘পার্সন’ শব্দ বসানো হয়। অর্থাৎ লিঙ্গসাম্যের দাবিতে ‘চেয়ারম্যান’ হইল ‘চেয়ারপারসন’।এখন সাহিত্যের একটা জেনের বা শাখার ক্ষেত্রে এই দাবি তো মোটেও উপেক্ষনীয় নয়।

 

সুতরাং উপরের প্রশ্নগুলা আর তাদের উত্তরের প্রেক্ষিতে এই জাগায় আইসা অনুভবি মানুষ মাত্রই বলবেন, কিশোর কবিতা নামটা অই জাতীয় কবিতার জন্য যথার্থ নয়। লাগসইও নয়।

 

এরপরও কেউ যদি বলেন শিশুসাহিত্য থাকলে কিশোর কবিতা মানতে আর অসুবিধা কি? অসুবিধা আছে। এইবার সেই ফিরিস্তিটাও দেই। শিশুসাহিত্য শিশুরা লিখেন না এইটা যেমন নিশ্চিত তেমনি এইটাও নিশ্চিত যে তা মূলত শিশুদের জন্যই লিখিত। আবার বলতে পারেন কেন, আপনি পড়েন না? হুম পড়ি। কিন্তু ওইটা বিশেষভাবেই শিশুদের জন্য রচিত। উল্টা একটা উদাহরণ দেই। ১৮+ সাহিত্য কি ১৮ এর নিচের কেউ পড়ে না। এইটা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় পড়ে। এমনকি এই ধরণের পাঠক যদি সংখ্যায় বেশিও হয় তবুও ওইটা ১৮+ই। কিন্তু বয়স বিবেচনায় কিশোর কবিতা ঠিক শিশুসাহিত্যের মতো অতোটা সুনির্দিষ্ট নয়। বরং শিশু থেকে কিশোর তরুণ হয়ে বড়দের স্তর পর্যন্ত এর প্রবেশ্যতা। পাঠগম্যতাও। আবার কিশোর কবিতা যেভাবে লিঙ্গবৈষম্যের বাটে পইড়া যায় শিশুসাহিত্য সেইভাবে পড়ে না। অর্থাৎ শিশু শব্দটা লিঙ্গনিরপেক্ষ হওয়ায় তার সর্বজনীনতা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ নাই। তারপরও একটা কথা হইল, কোন সাহিত্যিক জেনেরের এরম কলেজের বয়স ভিত্তিক সাঁতার টিমের মতো নাম না থাকাই ভাল। নাম হইতে পারে অন্য পেরিফেরিতে। যেমন প্রথমত আকারে ছোট বইলাই ‘ছোটগল্প’ নাম। কিম্বা প্রেমকে উপজীব্য কইরা লেখা বইলাই ‘প্রেমের কবিতা’। এমনি আরো আছে। প্রসঙ্গক্রমে বলি বাংলা শিশুসাহিত্যের অনুরূপ সাহিত্য কিন্তু ইংরেজিতে ‘চিলড্রেন লিটারেচার’ নয়।ইংরেজিতে অইগুলা ‘Juvenile literature’ হিসাবেই চিহ্নিত।

 

এই পর্যায়ে আইসা মনে হয় কোন যুক্তিশীল মানুষই ‘কিশোর কবিতা’ শব্দটাকে অইসব কবিতার জন্য যৌক্তিক নাম হিসাবে মানতে চাইবেন না।তা না চাই, তবে ছড়ার থেকে যে আলাদা একটা নাম এর জন্য প্রয়োজন এব্যাপারে আমরা এই প্রবন্ধের শুরুতেই মত রাখছি। কিন্তু কেবল মত রাখলেই তো হইব না। যথার্থ একটা নামের সন্ধানও করতে হইব।

 

আমাদের এই অনুসন্ধানের হাতেই এক সময় ধরা দিলো ‘কাব্যছড়া’ পদবাচ্য। অনেক ভাইবা দেখছি এই নামটা অইসব লেখার চরিত্র আর বৈশিষ্টের সম্যক প্রতিফলন। প্রথমোক্ত উদাহরণের লেখাগুলার দিকে আরেকবার খেয়াল করি। খালি চোখেই ধরা পড়ছে লেখাগুলা ছড়া আর কবিতার যুগল বৈশিষ্ট্যে গইড়া উঠছে। এইগুয়া ছড়া আর কবিতার দারুণ এক রসায়ন। আর এমন রসায়নের জন্য এর চাইতে উপযুক্ত আর কোন নাম পাই নাই। তাই শুন্য দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে এই নামে তুলনামূলক অচর্চিত নাগরিক পটভূমিতে কথিত কিশোর কবিতা লিখতে শুরু করি। বিভিন্ন কাগজে তা ছাপাও হইতে থাকে। অবশ্য লেখাগুলা ছাপলেও সবাই আবার নামটা ব্যবহার করে নাই। এইটাই স্বাভাবিক। দীর্ঘদিন ধইরা চর্চিত একটা নাম এক দিনেই পালটাইয়া যাইব এমনটা আশাও করি নাই। তবে কেউ কেউ এই নামটারে গ্রহণ করছেন। ছাপছেনও। এরপর অইসব লেখা নিয়াই ২০১০ সালে প্রকাশিত হয় আমার প্রথম কাব্যছরার বই ‘স্বপ্ন সমান আকাশ আমার’। পাঠকের চমৎকার সাড়ায় পরের দুই/তিন বছরেই বের হয় আরো ৪টা কাব্যছড়ার বই। আমার তরুণ ছড়া-বন্ধুরা ক্রমে এই নামটাকেই এই ধারার কবিতার জন্য যথার্থ হিসাবে গ্রহণ করে। কেউ কেউ এই নামে ডাকতে এবং লেখতেও শুরু করে। এই ধারার কবিতার একজন সার্থক স্রস্টা কবি আবু হাসান শাহরিয়ারও নামটাকে যথার্থ বলে অভিমত দেন। পাশাপাশি আরো অনেক সিনিয়র কবি ছড়াকারও এই ব্যাপারে তাদের সহমত ও সমর্থন জানান। সুতরাং এই প্রবন্ধের উপসংহারে আইসা বলতেই পারি poetic esance সম্পন্ন এই ছড়াগুলার লাগসই নাম আর কিছু নয়, কাব্যছড়াই।

*( এই লেখার ভাষারীতি লেখকের নিজস্ব)।

লেখকঃ ছড়াকার, গীতিকার ও প্রাবন্ধিক।

 

prothomaloলেখা জমা দেওয়ার ফর্ম

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on print
Print

সম্পর্কিত পোষ্ট……

প্রিয় লেখা
Серо белая кухня. Room b223, 12/f, block b, tuen mun industrial centre, 2 san ping circuit, tuen mun, n. Get in touch with us for the best quality custom prints.