বিখ্যাত কমিক চরিত্র সুপারম্যানকে চিনেন না এমন মানুষ কমই আছেন। বাল্যকালে অনেকেই সুপারম্যান
হতে চাওয়ার স্বপ্ন দেখত। এখন সুপারম্যানের কষ্টিউম পাওয়া গেলেও এক সময় সেটা সহজলভ্য ছিল না।
বাল্যকালে আবার কেউ কেউ হয়তো আমার মতো শার্ট প্যান্ট পরে ঘাড়ের উপর কোনরকম একটা গামছা
বেঁধে সুপারম্যান হওয়ার চেষ্টাও করেছেন। তবে অবাক করার মতো একটা তথ্য হলো এমন কিছু মাছ আছে
যারা সুপারম্যান না হলেও অল্প দূরত্বে সুপারম্যানের মতো উড়তে পারে।
বলছি উড়ুক্কু মাছেদের কথা, তারা উড়ুক্কু মাছ বা Flying Fish নামে পরিচিত।
উড়ুক্কু মাছের পরিচিতি
উড়ুক্কু মাছ Beloniformes বর্গের Exocoetidae গোত্রের কর্ডাটা পর্বের এই মাছগুলো বিচিত্র স্বভাবের হয়ে
থাকে। উড়ুক্কু মাছ বলতে কোন নির্দিষ্ট প্রজাতির মাছকে ইঙ্গিত করে না। এই পৃথিবীতে প্রায় ৭১ ধরণের
উড়ুক্কু মাছ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশেও এদের দেখতে পাওয়া যায়। সাধারণত এরা দলবদ্ধ হয়ে চলে। এদের
বক্ষ ও শ্রোণী পাখনা প্রসারিত হয়ে পাখার মতো গঠন লাভ করে। মাছটির ওড়ার জন্য চারটি পাখনা আছে।
যার মধ্যে দু’টি বড় পাখনা ও দু’টি ছোট পাখনা। পাখনাগুলো হালকা ও বাতাস ভর করার মতো গঠন থাকায়
এরা সহজেই বাতাসে ভাসতে পারে। এদের লেজ অনেকটা বিমানের প্রপেলারের মতো কাজ করে।
ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ বার্বাডোজকে উড়ুক্কু মাছের স্বর্গরাজ্য বলা যায়। এই মাছটি সেখানকার জাতীয় মাছের
মর্যাদা লাভ করেছে। বার্বাডোজের মুদ্রাতে উড়ুক্কু মাছের উপস্থিতি মাছটিকে আরও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে
পরিণত করেছে। এরা পাখিদের আগে থেকেই পৃথিবীতে আছে। একটি ফসিল থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা
যায় মাছগুলোর আগমন ডাইনোসর যুগেরও বহু আগে।
উড়ুক্কু মাছের বাতাসে ওড়ার গতিবেগ
এই মাছটি পানিতে ঘণ্টায় ৬০ কি. মি. বেগে চলে। আর পানির উপর এরা আরও দ্রুত গতিতে ঘণ্টায় ৭০ কি.
মি. বেগে এক লাফে ৪০০ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। এই দূরত্ব অতিক্রম করার সময় মাছগুলো ৩০
সেকেন্ড পর্যন্ত বাতাসে ভাসতে পারে। এদের দৈর্ঘ্য ১০ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। এরা বাতাস ও ঢেউ
এর গতিকে কাজে লাগিয়ে শূণ্যে ভাসার ক্ষমতা লাভ করে।
উড়ুক্কু মাছ কেন ওড়ে?
উড়ুক্কু মাছ দ্রুত গতিতে চলার সময় শিকারি মাছদের তাড়া খেলে বাধ্য হয়েই আত্মরক্ষার খাতিরে পানির
উপরে ওঠতে হয়। তাছাড়া পানির উপর ভেসে থাকা এক ধরণের খাবার এদের প্রিয় খাবার যেগুলো খেতে এরা
পানির উপরে ওঠে।
উড়ুক্কু মাছ সত্যিই কি বাতাসে ওড়ে ?
মাছটি ওড়ছে মনে হলেও প্রকৃত অর্থে এরা ঢেউ ও বাতাসের গতিকে কাজে লাগিয়ে বাতাসে ভাসে। যাকে
গ্লাইড বলে। বিষয়টিকে কাগজের রকেট বানিয়ে শূণ্যে ভাসানোর সাথে তুলনা করা যায়। তাই কাগজের
রকেটের মত উক্ত মাছগুগুলো আপাত দৃষ্টিতে উড়ছে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এরা উড়ে না। ১৯৪১ সালের
আগ পর্যন্ত এরা ওড়তে পারে বলে ধরা হলেও বিজ্ঞানীরা হাই স্পিড ক্যামেরাকে কাজে লাগিয়ে বুঝতে পারেন
যে আসলে এরা ওড়ে না, বাতাসে ভাসে।
পরিণতি
এই মাছ শিকারি মাছদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে শূণ্যে ভাসলেও পানির উপর আগে থেকেই অবস্থান করা
সামুদ্রিক কিছু পাখি এদের সহজেই ধরে ফেলে। কিছু মাছ পাখির আক্রমণ থেকে বাঁচলেও এরা পানিতে নামার
সাথে সাথেই শিকারি মাছদের আক্রমনের শিকার হয়। মাছটি খেতে খুবই সুস্বাদু। পাখি ও মাছের চেয়েও
ভয়ানক শিকারি হলো মানুষ। এদের বিভিন্ন রঙের প্রতি দুর্বলতা থাকায় মানুষ সহজেই এদের শিকার করতে
পারে। তবে দুঃখের বিষয় হলো ব্যাপক নিধনের কারণে সময়ের সাথে সাথে মাছগুলো দ্রুত কমতে শুরু
করেছে।